শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর বিবাহ ও নবুয়ত পূর্ব জীবন- (পর্ব-০২)

প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী খাদিজাতুল কোবরা (রা.) আরবের একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি নবীজির জন্মের ১৫ বছর আগে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খুওয়াইলিদ ইবনে আসাদ এবং মাতার নাম ফাতিমা বিনতে জায়িদ। ইসলাম গ্রহণের আগেই নিষ্কলুষ চরিত্রের জন্য তিনি তাহিরা বা পবিত্র উপাধি লাভ করেন। বিবি খাদিজা নবীজির সততা ও সত্যবাদিতার কথা শুনে তাকে ব্যবসায় তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত করেন। সিরিয়া থেকে ব্যবসা করে ফিরে এসে সঠিকভাবে হিসাব বুঝে দেন। এই ব্যবসায় অনেক লাভ করেন। ফলে তিনি নবীজির সততা ও আমানত দারিতায় মুগ্ধ হয়ে নবীজিকে জীবন সাথি হিসেবে পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এ সময় বিবি খাদিজা ছিলেন বিধবা। তাঁর আগের স্বামীর ঘরে কয়েকজন সন্তানও ছিল। বিবি খাদিজা তার দাসীর মাধ্যমে নবীজির চাচা আবু তালিবের নিকট বিবাহের প্রস্তাব দেন। চাচা আবু তালিব নবীজিকে বললে তিনি রাজি হয়ে যান। নবীজি ২৫ বছর বয়সে খাদিজা রা. কে বিবাহ করেন। তখন খাদিজা রা.এর বয়স ছিল ৪০ বছর। খাদিজা (রা.) জীবিত থাকাকালীন নবীজি দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করেননি। খাদিজাকে বিবাহের কারণে নবীজির আর্থিক দূরাবস্থা দূর হয়। ফলে নবীজি অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজের মুক্তির পথ খোঁজায় মনোনিবেশ করেন। সৈয়দ আমীর আলী বলেন, “নবীজির বিবাহ তাঁর জন্য বয়ে এনেছিল শান্তি ও প্রাত্যহিক পরিশ্রম থেকে মুক্তি, যা তাঁর মহান কাজে তাঁর মনকে প্রস্তুত করার জন্য অপরিহার্য ছিল।”

হেরাগুহার ছবি

নবীজি যখন হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন, তখন খাদিজা (রা.) খাবার নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় যেতেন। যেটা দেখে মহান আল্লাহ খুশি হয়ে যান। একদিন মহান আল্লাহ ফেরেস্তাকে বলেন, “দেখ খাদিজা খাবার নিয়ে পাহাড়ে আসতেছেন। জিবরাঈল তুমি যাও,আমার নবীজিকে বল আল্লাহ খাদিজাকে সালাম দিয়েছেন।”

খাদিজা নবীজির কাছে যাওয়ার পর নবীজি তাকে বললেন, আল্লাহ তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তিনি সালামের জবাব দেন। আল্লাহ যাকে সালাম দেন তিনি কত সৌভাগ্যবান। এভাবে ২৫টা বছর নবীজির পাশে ছিলেন বিবি খাদিজা। বিবি খাদিজার গর্ভে নবীজির চার মেয়ে ও তিন ছেলে জন্ম গ্রহণ করেন। তিন ছেলে হলেন-কাসিম,আব্দুল্লাহ ও তাহির। চার মেয়ে হলেন -রোকাইয়া, জয়নব, কুলসুম ও ফাতিমা। তিন ছেলে ছোটকালে ইন্তেকাল করেন। ৬০৫ সালে মক্কায় অবস্থিত কাবা ঘরের সংস্কার কাজ শুরু হয়। কিন্তু হাজরে আসওয়াদ তথা কালো পাথর স্থাপনকে কেন্দ্র করে গোত্রগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। নবীজি তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এ সমস্যার সহজ সমাধান করেন। তিনি নিজের গায়ের চাদর খুলে এর উপর হাজরে আসওয়াদ পাথরটি রেখে চার গোত্রের অধিপতিদের দিয়ে বহন করে নেন এবং নিজে পাথরটি যথা স্থানে স্থাপন করেন। ফলে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের হাত হতে মক্কা বাসি রক্ষা পেল। এভাবে তিনি নবুয়ত পূর্ব জীবনে প্রতিটি কাজে নবুয়তের সাক্ষর রাখেন।…..(চলমান)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *